ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিলেও রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক নানা চ্যালেঞ্জের মুখে তারা। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের বামপন্থী দলগুলোর নেতারা বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান কাজ নির্বাচন আয়োজন হলেও আগে পুরো ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। সব ব্যবস্থার সংস্কার ছাড়া সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক, গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না বলে তাঁদের ধারণা।
অন্তর্বর্তী সরকারের জরুরি করণীয় প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ স¤পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স গণমাধ্যমকে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। এটা ঠিক করতে হবে। বিভিন্ন স্থানে দেখতে পাচ্ছি, আবারও দলীয় লোক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এক দখলদার বিদায় করে আমরা আরেক দখলদার চাই না। যেসব জায়গায় নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, সেখানে যোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে হবে। গণ-অভ্যুত্থানে যারা হত্যা, নির্যাতনের সঙ্গে স¤পৃক্ত, তাদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছি।
নির্বাচনী প্রক্রিয়া সংস্কারের আহ্বান জানিয়ে প্রিন্স বলেন, এই সরকার তো অনন্তকাল ক্ষমতায় থাকবে না। তাই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের জন্য আলোচনা শুরু করার আহ্বান জানিয়েছি আমরা।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সাধারণ স¤পাদক বজলুর রশিদ ফিরোজ জানান, সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে নিউমার্কেটে হকার হত্যার মামলা করা হয়েছে। সে কি সেখানে ছিল? এটা প্রমাণ করা যাবে না। তার নামে শেয়ারবাজার, অর্থ পাচার নিয়ে কেন মামলা হলো না? অভ্যুত্থান তো আগের মতো বিচার, আইন বজায় রাখার জন্য হয়নি।
নির্বাচন বিষয়ে বজলুর রশিদের বক্তব্য, তড়িঘড়ি করারও দরকার নেই, আবার দেবই না এমনও দরকার নেই। আগে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে, তারপর দ্রুততম সময়ে নির্বাচন দিয়ে গণতান্ত্রিক যে ব্যবস্থা, সেই ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন
সামনে যেসব সংস্কার হবে তা দেশের সব রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাধারণ জনগণের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে নিতে হবে জানিয়ে বাংলাদেশ জাসদের সভাপতি শরীফ নূরুল আম্বিয়া বলেন, গত ১৫ বছরে স্বৈরশাসনের যে কুফল সমাজে রয়ে গেছে, সেগুলোর মূলোৎপাটন করতে হবে। নির্বাচন আয়োজনের আগে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের বিষয়গুলো প্রাধান্য দিতে হবে।
বিএনপির সঙ্গে সরকার পতনের যুগপৎ আন্দোলনে ছিল গণতন্ত্র মঞ্চ। তাদের শরিক বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, দেশের যেসব স্থানে রাজনৈতিক নৈরাজ্য চলছে তা নিয়ন্ত্রণে আনা, গত ১৬ বছরে বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় আনা, রিজার্ভ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেওয়াসহ আরও যে যে বিষয়ে সংস্কার প্রয়োজন তা সুনির্দিষ্ট করতে হবে।
দলটির সাধারণ স¤পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনসহ নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে।
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ স¤পাদক ফয়জুল হাকিম জানান, গণহত্যার বিচার, নিহতদের পরিবার ও আহতদের ক্ষতিপূরণ, গত ১৬ বছরের গুম ও খুনের বিচার, বিশেষ ক্ষমতা আইন, ডিএসএসসহ সব কালো আইন বাতিল করতে হবে। এ ছাড়া ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অসম চুক্তি জনসমক্ষে প্রকাশ ও বাতিলের দাবি জানান তিনি। আজিজ, সামিট, এস আলম গ্রুপের মতো যারা বাজার সিন্ডিকেটের জন্য দায়ী, তাদের আইনের আওতায় আনারও দাবি জানান তিনি।
দেশের বিদ্যমান সংবিধান জনগণকে ক্ষমতায়িত করার সংবিধান নয় বলে মনে করে ফয়জুল হাকিম। তিনি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের আগে যারা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, তাদের বিচার করতে হবে। জনগণের সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। গণ-অভ্যুত্থান হলেও জনগণের আকাক্সক্ষা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। -আজকের পত্রিকা